নবম-দশম শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা গ্রন্থে সুন্দর করে বর্ণনা করা হয়েছে শিক্ষার্থী এবং আদর্শবান শিক্ষকের দায়িত্ব-কর্তব্য এবং ভূমিকা নিয়ে। একজন শিক্ষার্থী যদি মনোযোগ দিয়ে শেখার উদ্দেশ্যে সেগুলো পড়ে নেন, আমার বিশ্বাস শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা-সম্মান প্রদর্শন বেড়ে যাবে এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের স্নেহ-ভালোবাসা-কর্তব্য সঠিকভাবে প্রয়োগ হবে।

আগামীকাল ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৯৫ সাল থেকে ১০০ দেশে প্রতি বছর এই দিনটিতে আন্তর্জাতিকভাবে শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে। আদর্শবান শিক্ষকদের কল্যাণ কামনা করছি। বাবা-মায়ের পরে আমরা যাদের স্থান দেই তারা হচ্ছেন সম্মানিত শিক্ষক। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সর্বত্রই এই মহান শিক্ষকদের শিক্ষা-দীক্ষা এবং আশীর্বাদ প্রয়োজন আমাদের।

একজন আদর্শবান শিক্ষক তিনি, যিনি নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের গুণাবলি, বর্তমান দুনিয়ার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে শেখা, নৈতিক মানদণ্ড শিক্ষা দেওয়া, শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বের করে এনে বিকশিত করা, শিক্ষার্থীদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে সমৃদ্ধ করে তোলা, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করাসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সচেতন করে তোলাই হচ্ছে শিক্ষকদের কাজ।

আদর্শ শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান অব্যাহত থাকা জরুরি। তাদের কাজের পুরস্কার হিসেবে সম্মাননা দেওয়া হলে তাদের মধ্যে ভালো কাজগুলো করার স্পৃহা আরও বেড়ে যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো এখনো শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে হয়। বিশেষ করে এমপিও ভুক্ত অনেক শিক্ষক তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণের দাবিতে নানা সময়ে সোচ্চার হতে দেখা যায়।

শিক্ষক দিবসেও তাদের দাঁড়াতে হয়। বেসরকারি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। বিশেষ করে করোনাকালীন এই সময়টাতে খুব কষ্টে দিন পার করতে হয়েছে শিক্ষকদের। তারপরেও তারা নিরলসভাবে জাতি গঠনে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। কিছু পথভ্রষ্ট শিক্ষকের জন্য আজকে শিক্ষকদের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। হরহামেশাই একটা কথা শোনা যায়, বিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষক পাঠদানে অবহেলা করে শিক্ষার্থীদের ওই বিষয়ে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন।

বিশেষ করে তারা শিক্ষার্থীদের বলে থাকেন, তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ফেল করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ধরনের প্রাইভেট বাণিজ্য মফস্বলে বেশি হয়। তবে এখন শহরেও হয়ে থাকে এই প্রাইভেট বাণিজ্যগুলো। কিছু শিক্ষক এমন আছেন, যারা তার ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেন। পত্র-পত্রিকায় এমন সংবাদও আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই শিক্ষকের দ্বারা ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থী, কিংবা শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা কিংবা বিদ্যালয়ে আর না আসা।

ফলে এ ধরনের কিছু শিক্ষকের কারণে কিছু প্রতিষ্ঠান অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থীর পরিবারের মাঝে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। তবে আজকাল শিক্ষকদের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা দিন দিন কমে যাচ্ছে। একটা সময় ছিল ছাত্র যদি বাইসাইকেল চালিয়ে কোথাও যেতেন, আর সামনে যদি তার শিক্ষককে দেখা যেতো, তাহলে ছাত্র সাইকেল থেকে নেমে শিক্ষককে সালাম জানিয়ে চলে যেতেন।

শিক্ষককে দেখলে সালামের যে প্রচলন ছিল তা অনেকটা উঠে যাচ্ছে। শিক্ষকদের সামনে এখন অনেক শিক্ষার্থী সিগারেট খেতেও ভয় পান না। শিক্ষকের সামনে সিগারেট খাওয়া থেকে শুরু করে উচ্চস্বরে কথা বলা, সালাম না দেওয়া, শিক্ষকদের সাথে দেখা হলে কুশল বিনিময় না করা এগুলো আস্তে আস্তে বহুমাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এখন অনেক অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন।

বিশেষ করে ধূমপান থেকে শুরু করে, মারামারি, ইভটিজিং, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, জুয়া, প্রতারণা, মানুষ হত্যাসহ ইত্যাদি রকমের জঘন্য কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। পড়াশোনায় মনোযোগ না দিয়ে বাবা-মায়ের কথা অমান্য করে বিদ্যালয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়ছেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং পরিবার সবার গাফিলতি এবং সঠিক ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হওয়ায় অন্যায় বেড়ে যাচ্ছে।

একটি আদর্শ জাতি গঠনে আমরা আদর্শবান শিক্ষক প্রত্যাশা করি। যিনি কিনা কোনো ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হবেন না। যখন আদর্শবান শিক্ষকসমাজ গড়ে উঠবে এবং তাদের যথোপযুক্ত চাহিদা রাষ্ট্র ব্যবস্থা করতে পারবে, তখন আদর্শবান শিক্ষার্থী তৈরি হবে এবং সমাজে এত অন্যায় অনিয়ম থাকবে না।